ভুমিকা
সিরাজগঞ্জ জেলার অধিকাংশ লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষির উপর নির্ভরশীল হলেও এ জেলা শিল্পায়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। বিশেষ করে তাঁত সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে এ জেলা প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তাঁত শিল্পের আওতায় বিভিন্ন ধরণের হ্যান্ডলুম ও পাওয়ারলুম শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ ছাড়াও এ জেলায় আরও নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। তবে সিরাজগঞ্জ জেলায় শিল্পায়নের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা রয়েছে। (১) যমুনা নদীর ভাঙ্গন। নদীর করাল গ্রাসে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাই নদীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে নদী ভাঙ্গন রোধ করতে পারলে নদীর করাল গ্রাস থেকে বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান রক্ষা পাবে। ফলে আরও নতুন শিল্প স্থাপিত হবে। (২) ঘনঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট কমাতে পারলে শিল্প সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হবে। (৩) সিরাজগঞ্জ জেলায় যে সকল সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংক আছে তারা সহজ শর্তে শিল্প খাতে ঋণ দিতে চান না। ঋণ দিলেও সুদের হার বেশী। তাই এ জেলায় পর্যাপ্ত ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সুদের হার কমাতে হবে। (৪) শিল্প ক্ষেত্রে নতুন কোন গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে না। ফলে গ্যাস ভিত্তিক শিল্প স্থাপনে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাই শিল্পক্ষেত্রে গ্যাস সংযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সম্ভাবনা ‘বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু’ চালু হওয়ায় পূর্ব পশ্চিমাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে এই জেলায় বিদ্যুত, গ্যাস প্রাপ্তি সহ সড়ক ও নৌ পথে পরিবহন ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ফলে এ জেলায় শিল্পন্নয়নের এক নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে। একই সালে সরকারের উদার শিল্পনীতি, বেসরকারী উদ্যোগের প্রতি দৃঢ় সমর্থন, সর্বাত্মক ভূমিকা থাকায় সিরাজগঞ্জ জেলায় শিল্পায়ন প্রক্রিয়ায় এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধন অব্যাহত রয়েছে। বহু নতুন নতুন উদ্যোক্তা এ জেলায় শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসছে। এ সকল উদ্যোক্তাদের অবকাঠামো সুবিধা দেয়া গেলে আরও অনেক শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। শিল্পনগরী সম্প্রসারণ শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্প নগরী সম্প্রসারণের জন্য ১২.৬৬ একর জমির অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবটি একনেক সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা যায়। শিল্প নগরীতে বরাদ্দযোগ্য জমি না থাকায় নতুন উদ্যোগের প্লট বরাদ্দ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে বিসিকের হাতে ১০/১২ টি প্রস্তাব রয়েছে। এই মুহুর্তে প্লট বরাদ্দ প্রদান করা হলে উক্ত শিল্প ইউনিটগুলি বাস্তবায়ন করা সম্ভব এবং আরও অনেক উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা সম্ভব হবে কাজেই শিল্প ক্ষেত্রে সম্প্রসারণ কাজটি সম্পন্ন করা জরুরী।
শিল্প পার্ক প্রকল্প বাস্তবায়ন
বঙ্গবন্ধু সেতুর ২.৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় ৪০০.০০ একর জমির উপর ২০০.০০ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয়ে শিল্প পার্ক স্থাপনের জন্য ১লা ডিসেম্বর/৯৯ তারিখে একনেক কর্তৃক অনুমোদন করা হয়। পরবর্তীতে ২৩ জানুয়ারী/০১ জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম সহ উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্পের সাইট অফিস নির্মাণ, আসবাবপত্র, অফিস সরঞ্জামাদি, যানবাহন ক্রয়সহ লোকবল নিয়োগ করা হয়। পরবর্তীতে জুন/০৪তারিখে প্রকল্প মেয়াদ শেষ হওয়ায় তা বর্ধিত না করায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। শিল্প পার্ক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারে ৫৬০ টি শিল্প স্থাপন এবং ১ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হবে। সিরাজগঞ্জ তথা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রকল্পটি পুনরায় চালু করার জন্য বিসিক প্রধান কার্যালয় কর্তৃক ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়েছে বলে জানা যায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য আগামী অর্থ বৎসরে বাজেট বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে।
রাজধানী ও বিভাগীয় শহরের মত শিল্পায়ন না হলেও ইদানিং যমুনা সেতুর বদৌলতে সদর উপজেলার শিয়ালকোল ও কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নে রড, সিমেন্ট, টেক্সটাইলসহ অনেক ছোট ও মাঝারী আকারের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। শাহজাদপুরের উল্লেখযোগ্য শিল্প কারখানাগুলো হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, ফ্লাওয়ার মিল, মিল্ক ভিটা, রাইস মিল, তৈলমিল, টৈক্সটাইল মিল, ডাইং কারখানা, বরফকল, ওয়েল্ডিং ও হিমাগার। কামারখন্দে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের সুবিধার কারণে ভদ্রঘাট ইউনিয়নের ২/৪ টি মাঝারী শিল্প কারখানা গড়ে উঠলেও গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে উপজেলা সদরসহ অন্যান্য ইউনিয়নে কোন শিল্পায়ন হয়নি। গ্যাস ও বিদ্যুত সুবিধা প্রদান করলে মাঝারী ও ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা এ উপজেলায় রয়েছে। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর অতি সন্নিকটে তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ বেলকুচি উপজেলায় গ্যাস লাইন/গ্যাস সরবরাহ না থাকায় তাঁত শিল্প সমৃদ্ধির জন্য তাঁত বস্ত্র ক্যালেন্ডারিং মিল, মার্চরাইজিং মিল, কটন মিল জাতীয় শিল্প কারখানা স্থাপনের মত যথেষ্ট সম্ভাবনা ও উদ্যোগী ব্যক্তি থাকা সত্ত্বেও এ সকল শিল্প কলকারখানা এ এলাকায় প্রতিষ্ঠা লাভে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। কাজেই উল্লেখিত শিল্প কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে অতি জরুরী ভিত্তিতে বেলকুচি উপজেলাতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বেলকুচিতে গ্যাস সম্প্রসারিত হলে এ এলাকায় গড়ে উঠবে তাঁতের সাথে সম্পর্কিত বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং সে সাথে হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
শিল্প সংক্রান্ততথ্য
|
||||
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস